আরেফিন নগর, বায়েজীদ বোস্তামী, চট্টগ্রাম

আর্টিকেল

  • সমবায় সমিতি নিয়ে কিছু কথা

সমবায় সমিতি নিয়ে কিছু কথা

‘সমবায়ই শক্তি সমবায়ই মুক্তি’ 
এ দেশের উন্নতিতে সমবায় সমিতি ব্যাপকভাবে অবদান রাখতে পারে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ এক হয়ে একটি চক্রে আবদ্ধ হতে পারে। এর প্রতিটি সদস্যের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় এক করে একটি বড় মূলধন তৈরি করা যেতে পারে। এই মূলধন দ্বারা সমিতির সদস্যরা কোনো বড় কার্য সম্পাদন করতে পারবেন। এখানকার সদস্যদের অবশ্যই নিবেদিতপ্রাণ হতে হবে। সমিতিতে সঞ্চয় ঠিকমতো দিতে হবে এবং বিভিন্ন গঠনমূলক আলোচনায় অংশগ্রহণ নিতে হবে। যেসব সদস্যের প্রকৃতই ঋণ দরকার, তাঁদের ঋণ দিতে হবে এবং যাঁরা ঋণ নেবেন, তাঁদের সঠিক সময়ে ঋণের কিস্তি ফেরত দিতে হবে।

সমবায় সমিতির প্রত্যেক সদস্যের মতামত গুরুত্ব দিতে হবে এবং মুক্ত আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। সবার মতামতের ওপর ভিত্তি করে একটি গঠনমূলক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে। সঞ্চয়ের টাকা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ, সঠিক বিনিয়োগ সমিতির উন্নতিতে সহায়ক হবে।
সমবায় সমিতি যেমন সদস্যদের কল্যাণের জন্য কাজ করবে, ঠিক একইভাবে এর সদস্যদেরও সমিতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে এবং সমিতির উন্নতিতে অবদান রাখতে হবে।
প্রতিটি সমবায় সমিতির সঠিক কর্মপন্থা ও নীতিমালা থাকতে হবে। এগুলো করতে হবে দেশ ও দশের সার্বিক কল্যাণের কথা মাথায় রেখে। যত বেশি সমবায় সমিতি হবে, ততই এই দেশের মানুষ সত্যবদ্ধ হবে। মনে রাখতে হবে, একটি ভালো সমিতি পুরো একটি এলাকার উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে, যেটার প্রভাব পড়বে রাষ্ট্রের ওপর। প্রকৃতপক্ষে সমবায়ের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা অর্জন করা সম্ভব।

সভাপতি 
মো: শহিদুল ইসলাম 
মরিয়ম কর্মজীবী সমবায় সমিতি

  • টাকা সঞ্চয় আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

 

টাকা সঞ্চয় আমাদের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এখানে কিছু মূল কারণ তুলে ধরা হলো:

1. অপ্রত্যাশিত ব্যয় মোকাবেলা: জীবনে নানা সময়েই হঠাৎ করে খরচের প্রয়োজন হতে পারে, যেমন স্বাস্থ্যজনিত খরচ, যন্ত্রপাতি বা গৃহের মেরামত ইত্যাদি। সঞ্চয় থাকলে এই ধরনের জরুরি পরিস্থিতি সহজেই সামলানো যায়।

2. অর্থনৈতিক নিরাপত্তা: কর্মজীবনে স্থায়িত্ব না থাকলে বা চাকরি হারানোর মতো পরিস্থিতিতে সঞ্চয় অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রদান করে। এটি কঠিন সময়ে সাহায্য করে টিকে থাকতে।

3. স্বাধীন জীবনযাপন: পর্যাপ্ত সঞ্চয় থাকা মানে আপনি জীবনের নানা পর্যায়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এটি পরিবার বা সমাজের উপর নির্ভরতা কমায় এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।

4. বড় লক্ষ্যে পৌঁছানো: অনেক সময় বড় কোনো লক্ষ্য যেমন, বাড়ি কেনা, শিক্ষা খাতে ব্যয় বা নিজের ব্যবসা শুরু করতে সঞ্চয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঞ্চয়ই এ ধরনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রথম ধাপ।

5. অবসর জীবনের প্রস্তুতি: কর্মজীবন শেষে নির্ভার অবসর জীবন কাটাতে সঞ্চয় অপরিহার্য। দীর্ঘমেয়াদে ছোট ছোট সঞ্চয় ভবিষ্যতে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করে।

পরিকল্পিত সঞ্চয় জীবনে আর্থিক স্থিতিশীলতা এনে দেয় এবং স্বপ্ন পূরণের পথ তৈরি করে। সুতরাং, সঞ্চয় করা শুধু প্রয়োজন নয়, বরং এটি একটি সাফল্যময় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

  • কমিউনিকেশন স্কিল

কমিউনিকেশন স্কিল


কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা হলো অন্যের দেওয়া তথ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারা এবং নিজে যা বলতে চান, তা অন্যকে সঠিকভাবে বোঝাতে পারা।
ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয় ক্ষেত্রেই ভালো যোগাযোগ দক্ষতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার আত্মবিশ্বাস এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা বিভিন্নভাবে সুফল বয়ে আনবে। এর ফলে আপনি আরও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন। ব্যক্তি এবং পেশাগত জীবনে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা আপনার জন্য অনেকটাই সহজ হবে, যদি আপনার যোগাযোগ দক্ষতা সমৃদ্ধ থাকে।
আপনার কমিউনিকেশন স্কিল (Communication Skill) উন্নত করার বেশ কয়েকটি সহজ উপায় রয়েছে যা সামান্য অনুশীলনের মাধ্যমে নিখুঁত করা যেতে পারে। যেমনঃ
১. একজন ভাল শ্রোতা হন
আপনার কথাটি ভাল ভাবে জানাতে সক্ষম হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে অন্য ব্যক্তি আপনাকে কী বোঝাতে চাইছেন। তাই আপনার কথা বলার চেষ্টা করার আগে আপনাকে অবশ্যই মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে।
ভাল করে শোনা আপনাকে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। কারণ আপনি আরও ভাল ভাবে জানেন যে অন্য ব্যক্তি আপনার কাছ থেকে কী আশা করছেন।
২. কথা বলার আগে চিন্তা করুন
আপনার যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল চিন্তা করা এবং আপনার বার্তা সঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্য ঠিকঠাক বাক্য গঠন করা।
আসলে আপনার বার্তা জানানোর আগে কিছুটা চিন্তা করা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ এটি আপনাকে আপনার পয়েন্টগুলিকে আরও ভাল ভাবে সংগঠিত করার অনুমতি দেবে।
৩. তাড়াহুড়ো করবেন না
ধীর গতির এবং অবিচলিত যে কেউ জয়ী হবেনই; এটি যোগাযোগের সময়ও একেবারে সত্যি। কারণ আপনি যদি খুব দ্রুত কথা বলার চেষ্টা করেন, তবে আপনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে মিস করতে পারেন।
আপনার যোগাযোগের দক্ষতা উন্নত করতে ধীর গতিতে কথাবার্তা বলুন। যাতে আপনি আপনার পয়েন্টগুলি একদম গুছিয়ে জানাতে পারেন। এবং রিসিভারও আপনার বার্তাটি পুরোপুরি বুঝতে করতে পারে।
কমিউনিকেশনের কিছু রুলস বা থিউরি আপনাকে জানতে হবে।
এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর গুলো খুঁজে যাচাই করুন আপনার কমিউনিকেসন স্কিলস ঃ
১. আপনি কি কথা বলার সময় আত্মবিশ্বাসী থাকেন?
২. আপনি কি প্রস্তুতি নিয়ে ও যথাযথ পূর্বপরিকল্পনা করে যোগাযোগ করেন?
৩. আপনি কি একজন ভালো শ্রোতা অর্থাৎ যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁর কথা মন দিয়ে শোনেন কি না?
৪. আপনি কি যোগাযোগ করার সময় অন্যকে সহজেই বুঝিয়ে বলতে পারেন যে বিষয়ে আপনি যোগাযোগ করছেন?
৫. আপনি কি যোগাযোগ করার সময় অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও সৌজন্যবোধ বজায় রেখে কথা বলেন?
৬. আপনি কি যোগাযোগের সময় প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত উপস্থাপন করেন?
৭. আপনি কি অপ্রয়োজনীয় কথা বাদ দিয়ে টু দ্যা পয়েন্টে কথা বলেন?
৮. কথা বলার সময় আপনি কি মুখের ভাব, বডি লেঙ্গুইজ, গলার স্বর, ইত্যাদি বিষয়ে সচেতন থাকেন?
৯. আপনি কি একজন ভালো শ্রোতা অর্থাৎ যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তাঁর কথা মন দিয়ে শোনেন কি না?
১০. লিখিত যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনি কি বড় বড় প্যারাগ্রাফ না লিখে ছোট ছোট বাক্য ও বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করেন?
১০. আপনি কি পেশাদার নেটওয়ার্ক বা অনলাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কল করার আগে টেক্সট পাঠিয়ে অনুমতি নেন?
১১. কাউকে একবার কল করেছেন, তিনি হয়তো ব্যস্ততা বা অন্য কোন কারণে কল রিসিভ করতে পারছেন না, আপনি তাঁকে বার বার কল করে যাচ্ছেন? নাকি আর কল না করে একটা টেক্সট দিয়ে রাখবেন?
মিলিয়ে নিন আপনার সাথে…

ধন্যবাদ 

সভাপতি 

মরিয়ম কর্মজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড 

  • টাকা জমানোর চমৎকার কিছু কৌশল


প্রতিদিনের খুচরা টাকাগুলো জমিয়ে রাখতে পারলেই মাস শেষে বড় একটা অংকের টাকা জমিয়ে ফেলতে পারবেন আপনি। স্বল্প আয়, তবুও সেখান থেকে কত টাকা সঞ্চয় করতে পেরেছেন আপনি! হিসেবের খাতায় যদি শুধু শূন্যের অবস্থা বিরাজ করে তবে ঠিক এই মুহূর্ত থেকেই সচেতন হতে হবে আপনাকে।
কারণ শুধুমাত্র আয় করাই যথেষ্ট নয়, আপনার ব্যয়ের হিসেবটাও ঠিক রাখতে হবে এবং সাথে সঞ্চয়ের ঝুলিও করতে হবে ভারী। টাকা জমানোর বা সঞ্চয় করার তেমন অভিজ্ঞতা নেই বলে হিমশিম খাচ্ছেন এই ভেবে যে, কীভাবে টাকা জমানো শুরু করবেন?
কোন চিন্তাই নেই! খুবই সহজ কিছু উপায় মেনে চলতে পারলে এবং বাজেট করতে শিখে গেলে টাকা জমানো কোন কঠিন ব্যাপার নয়।
জেনে নিন টাকা জমানোর খুবই চমৎকার এবং অসাধারণ কয়েকটি উপায়।
১/ নিজের ব্যয়ের একটি বাজেট তৈরি করুন: কীভাবে আপনার ব্যয়ের বাজেট তৈরি করবেন বলে ভাবছেন? যে মাস থেকে বাজেট শুরু করতে চাচ্ছেন সে মাসের শুরুতেই আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার রিসিটটি রেখে দিন। শুধু প্রথম দিনেরটাই নয়, পুরো মাসেরটা এইভাবে একসাথে জমিয়ে ফেলুন।
রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে, জামা কিনতে গেলে, দরকারি জিনিস কিনতে গেলে- সব জায়গার রিসিট জমিয়ে রেখে মাস শেষে সেগুলো নিয়ে বসুন। এরপর আপনি নিজেই পরিষ্কারভাবে বুঝতে এবং মেলাতে পারবেন আপনার টাকা কোন খাতে কম বা বেশি খরচ হচ্ছে। সেই হিসাব করে পরের মাসের জন্য বাজেট ঠিক করে ফেলুন।
২/ আলাদা খামে খরচের টাকা গুছিয়ে রাখুন: আপনার খরচের হাত খুব যদি বেশী হয় তবে সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুবই কাজে দেবে। প্রতি মাসের শুরুতেই আলাদা খামে খরচ করার জন্যে টাকা গুছিয়ে তুলে রাখুন।
প্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন খাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন খামে টাকা রাখুন, যেমন- দরকারি জিনিসপত্র কেনার জন্য আলাদা খাম, নিজের প্রিয় কিছু কেনার জন্য আলাদা খাম, বই কেনার জন্য আলাদা খাম! কোন খামের টাকা শেষ হয়ে গেলে সেই মাসের জন্য সেটাই আপনার বাজেট। এর বাইরে আর আপনি খরচ করতে পারবেন না।
৩/ টাকা জমানোর ক্ষেত্রে ছোটখাটো পরিকল্পনা করুন: টাকা জমানোর অভ্যাসটা খুব ছোটখাটো ভাবে শুরু করতে পারেন আপনি। মাসের প্রথমেই আপনার আয়ের একটা ছোট অংশ আলাদা করে রাখুন জমানোর জন্যে।
এরপর প্রতিদিনের খরচ থেকে পঞ্চাশ-একশ-দুইশ টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করুন এবং একটা পুরো সপ্তাহ শেষে কত টাকা বাঁচল সেটার হিসেব রাখুন। সেটার উপর ভিত্তি করে পরবর্তি সপ্তাহের জন্য টাকা বাঁচানোর পরিকল্পনা করুন।
৪/ বোনাসের সম্পূর্ণ টাকা খরচ করবেন না: প্রতিটা অফিসেই বিভিন্ন উপলক্ষ্য এবং পারফর্মেন্স-এর উপরে বোনাস দিয়ে থাকে। বোনাস এর টাকা হাতে পেয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই খুশি হয়ে সকল টাকা একবারেই খরচ করে ফেলবেন না। বোনাসের কিছু টাকা আলাদা করে জমানোর জন্যে রেখে দিন। ভবিষ্যৎ এ কাজে আসবে।
৫/ খুচরা টাকাগুলো আলাদা করে রাখুন: বিকেলে বাইরে বের হলেই চা, কেক বিস্কুট কিংবা পুরি খেয়ে টাকা দেওয়ার পরেই একগাদা খুচরা টাকা হাতে চলে আসে। বাসে কিংবা রিকশাতে যাতায়াতের সময়েও এমন বহু খুচরা টাকা জমে যায় হাতে।

ধন্যবাদ 

সভাপতি 

মরিয়ম কর্মজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড 

  • ইসলামের দৃষ্টিতে সমবায় সমিতি

 

ইসলামের দৃষ্টিতে সমবায় সমিতি

সমবায় সমিতির সাথে আজকাল আমরা সবাই পরিচিত। বর্তমান সময়ে গ্রামে ও শহরে এমন এলাকা নেই যেখানে সমবায় সমিতি নেই। সমবায়ের মূলমন্ত্র হলো- ‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। ‘দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’- এই গল্প আমাদের সবারই জানা। আমাদের দেশে অনেক বড় কাজ বর্তমানে সমবায়ের মাধ্যমে সংঘটিত হচ্ছে, যা হয়তো কখনো একার পক্ষে করা সম্ভব হতো না। ১৯৮৪ সালের সমবায় অধ্যাদেশ এবং ১৯৮৭ সালের সমবায় বিধি অনুসারে সমবায় সমিতিগুলো পরিচালিত হচ্ছে।

সমবায় সমিতির সংজ্ঞা : সমশ্রেণীভুক্ত কতিপয় ব্যক্তি সমঅধিকার ও দায়িত্বের ভিত্তিতে পারস্পরিক কল্যাণের পক্ষে স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে আইন অনুযায়ী যে সংগঠন গড়ে তোলে তাকে সমবায় সমিতি বলে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এর মতে- ‘‘সমাজের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের ব্যক্তিগণ সমঅধিকার ও দায়িত্বের ভিত্তিতে যে সংস্থা গড়ে তোলে তাকে সমবায় সমিতি বলে।’’ কোন বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রয়াসই সমবায়। পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা, সুখ-দুঃখের অংশীদার হওয়া ইত্যাদিই সমবায়ের মূলকথা। আর পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা ব্যতীত গোটা বিশ্ব ব্যবস্থার অস্তিত্ব আজ হুমকির সম্মুখীন। একাকী মানুষ হিসেবে যে যত জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, শক্তিধর অথবা বিত্তশালী হোক জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সবকিছুকেই সে সংগ্রহ করতে পারে না। বরং জীবন ধারণের প্রতিটি স্তরে প্রত্যহ মানুষকে বহু লোকের মুখাপেক্ষী হতে হয়।

ইসলামে সমবায় সমিতি : সমবায়ের মাধ্যমে একে-অপরকে সহযোগিতা করে সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধনের প্রচেষ্টা অবশ্যই ইসলাম সমর্থিত একটি চমৎকার উদ্যোগ। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘‘সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে-অন্যকে সাহায্য করবে না। আল্লাহকে ভয় করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ শাস্তিদানে কঠোর।’’ তাই শুধু আত্মপ্রতিষ্ঠা বা মুনাফা অর্জন নয় বরং ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠাই সমবায় সমিতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ইসলামের দৃষ্টিতে সমবায়ের উদ্দেশ্য হবে বৃহত্তর মানব কল্যাণ, সংকীর্ণ দলীয় বা জাতীয় স্বার্থ নয়।

সমবায় সমিতির উদ্দেশ্য : সমবায় সমিতির বহুবিধ উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন- দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্য অর্জন, আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন, মোটা অংকের মূলধন সৃষ্টি, নৈতিক শিক্ষা, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সামাজিক উন্নয়ন, মধ্যস্থতাকারীদের উৎখাত, সেবার মানসিকতা, সামাজিক বন্ধন, সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করা, আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন, সঞ্চয়ী করে তোলা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা, আইনগত সত্তা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। তবে বহুধা উদ্দেশ্যের মধ্যে সমবায় সমিতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত- ‘‘দরদী সমাজ গঠনে অংশগ্রহণ করা এবং সমাজে আদল ও ইহসান প্রতিষ্ঠা করা’’।

সমবায়ের অপরিহার্যতা : সমবায়ের আদলে কাজ করে আজ তুরস্কের ইসলামপন্থী দল ক্ষমতায় এসেছে। অবশ্য এ জন্য প্রয়োজন সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সুষ্ঠু পরিকল্পনা, নিজেকে সমাজকর্মী মনে করা, ইসলাম প্রতিষ্ঠাকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা ইত্যাদি। মুসলমানদের মনে রাখা দরকার- আল্লাহ মুসলমানদের মানুষের কল্যাণের জন্যই এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। এই দায়িত্বটি পালন না করলে কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনা ভোগ করতে হবে।

সমবায়ের মূলনীতি : সেবা, সহযোগিতা, সমঝোতা, সততা, সম-ভোটাধিকার, সাম্যতা, একতা, গণতন্ত্র, স্বেচ্ছামূলক সংগঠন, মিতব্যয়িতা, সখ্যতা ইত্যাদি। সমবায়ের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজের ভাগ্য উন্নয়নেরও প্রয়াস থাকে। নিচে সংক্ষেপে দু’-একটি নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

একতা : ‘‘তোমরা আল্লাহ্র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’’ (সূরা আলে ইমরান-১০৩)। একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। তাই কুরআনুল কারীমের উপরোক্ত আয়াতে ঐক্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে নিষেধ করা হয়েছে। আয়াতে ‘আল্লাহ্র রজ্জু’ বলে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের রেওয়ায়েতে হুজুর (সাঃ) বলেন- ‘‘কুরআন অথবা দ্বীনকে রজ্জু বলার কারণ এই যে, এটা একদিকে আল্লাহ্ তা’য়ালার সাথে দুনিয়াবাসী মানুষের সম্পর্ক কায়েম করে এবং অন্যদিকে বিশ্বাস স্থাপনকারীদের পরস্পর ঐক্যবদ্ধ করে একদলে পরিণত করে। আয়াতে মুসলমানদের দু’টি নির্দেশ দেয়া হয়েছে-

১. আল্লাহ্ তা’য়ালার প্রেরিত জীবন ব্যবস্থার অনুসারী হয়ে যাও।

২. আল্লাহ্র দ্বীনকে সবাই মিলে শক্তভাবে ধারণ কর।

মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্যের ইতিবাচক দিক ফুটিয়ে তোলার পর নেতিবাচক দিক সম্পর্কেও সতর্ক বাণী উচ্চারণ করে বলা হয়েছে- পরস্পর বিভেদ সৃষ্টি করো না। অপর এক আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘‘তোমরা নিজেদের মধ্যে বিভেদ করো না, করলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে এবং তোমাদের শক্তি বিলুপ্ত হবে। আর তোমরা ধৈর্যধারণ করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’’। (সূরা আনফাল- ৪৬)। ‘‘নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্য পথে চলো না। তা হলে সে সব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।’’ (আল্ আনআম- ১৫৩)

অনৈক্যের কুফল : অনৈক্য যে কোন জাতির ধ্বংসের সর্ব প্রথম ও সর্ব প্রধান কারণ। এ কারণেই কুরআনুল কারীমে বারবার বিভিন্ন ভঙ্গিতে অনৈক্যের বীজ বপন করতে নিষেধ করা হয়েছে। সূরা আল আন্আমে এসেছে- ‘‘নিশ্চয়ই যারা স্বীয় দ্বীনকে খন্ড বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই’’। (সূরা আল আনআম- ১৫৯)। এছাড়া কুরআন বিভিন্ন পয়গম্বরের উম্মতদের ঘটনাবলী বর্ণনা করে দেখিয়েছে যে, তারা কিভাবে পারস্পরিক মতবিরোধ ও অনৈক্যের কারণে জীবনের উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক লাঞ্ছনায় পতিত হয়েছে।

ঐক্যের মূল ভিত্তি : ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে বিভিন্ন জাতি বিভিন্ন মত পোষণ করে থাকে। সাধারণত ভাষা, বংশ, অঞ্চল ইত্যাদিকে ঐক্যের ভিত্তি মনে করা হয়। কিন্তু ইসলামে ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে বিবেচনা করা হয়।

ক. এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহ্র আনুগত্য।

খ. আল্লাহ্র রাসূলের (সাঃ) পরিপূর্ণ অনুসরণ।

গ. কুরআন ও সুন্নাহকে জীবন পথের একমাত্র দিশারী হিসেবে গ্রহণ।

মুসলিম যে ভাষায় কথা বলুক, আর যে অঞ্চলেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন তাদের ভাষা, বর্ণ, আকার আকৃতিতে যতই পার্থক্য থাকুক তাওহীদের প্রতি অবিচল ঈমান, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর পরিপূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণ, আল্ কুরআন ও সুন্নাহকে দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়ার মাধ্যমে মুসলিম জাতির মধ্যে কুরআনে বর্ণিত কাঙ্ক্ষিত ঐক্য গড়ে উঠতে পারে। সূরা সফে আল্লাহ্ যে ঐক্যের কথা বলেছেন নিম্নোক্ত ভাষায়, ‘‘আল্লাহ্ তো ভালবাসেন সেই সব লোকদের যারা আল্লাহ্র রাস্তায় ঐক্যবদ্ধভাবে এমনভাবে জিহাদ করে যেন তারা সীসাঢালা মজবুত প্রাচীর।’’

ইসলামী বিধান সমবায়ের সহায়ক : ইসলামের দৈনন্দিন পালনীয় বিধানাবলীর প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ইসলামের প্রতিটি বিধান সমাজে ঐক্য প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির সহায়ক। দৈনিক পাঁচবার জামায়াতে নামায, শুক্রবারে জুমু’আর জামায়াত, ঈদের জামা’য়াত, হজ্জের মাধ্যমে বিশ্ব জামা’আত মুসলিমদের একতাবদ্ধ হওয়ার চিরন্তন আহবান। এছাড়া পারস্পরিক হিংসা, বিদ্বেষ, শত্রুতা, অন্যের অনিষ্টকরণ, দ্বনদ্ব-কলহ, কথাবার্তা বন্ধ রাখা, গীবত, অপবাদ, অন্যকে কষ্ট দেয়া, খারাপ ধারণা পোষণ, মহামারী আক্রান্ত এলাকা থেকে পলায়ন, কাউকে অবজ্ঞা, অধীনস্থ লোকদের কষ্ট দেয়া, বংশের গৌরব, অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ, ঝগড়া, পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি ঐক্য বিনষ্টকারী ভাইরাসকে সমূলে উৎপাটন করে সেখানে ভ্রাতৃত্বের চর্চা, সহানুভূতি, ভালবাসা, পরোপকার, পরস্পরকে সদুপদেশ, বিপদ-আপদে সাহায্য, সহমর্মিতা, সহাবস্থান, অপরকে অগ্রাধিকার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, মেহমান, প্রতিবেশী, ইয়াতিম, গরীব-মিসকিন, নারী সমাজের অধিকার আদায়, বড়দের প্রতি সম্মান, ছোটদের প্রতি স্নেহ, রোগীর সেবা, পরস্পরের কল্যাণ কামনা, সংশোধনের উদ্দেশ্যে গঠনমূলক সমালোচনা ইত্যাদি বিষয়কে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। যা বৃহত্তর ঐক্য বিনির্মাণে শুধু সহায়কই নয়, অনিবার্য অনুষঙ্গও বটে। জাতীয় ঐক্যের উপর ইসলাম প্রভূত গুরুত্বারোপ করে। আজকে বিশ্বের দিকে দিকে মুসলিম জাতির দুরবস্থা তা থেকে উত্তরণ পেতে হলে মুসলিমদের মাঝে বৃহত্তর ঐক্যের বিকল্প নেই।

সহমর্মিতা : রাসূল (সাঃ) বলেন- ‘‘পারস্পরিক দয়া, ভালবাসা এবং হৃদ্যতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে তোমরা মুসলিমগণকে একটি দেহের ন্যায় দেখতে পাবে। দেহের কোন অঙ্গ যদি পীড়িত হয়ে পড়ে তাহলে অপর অঙ্গগুলোও জ্বর ও নিদ্রাহীনতাসহ তার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকে’’। (বুখারী, মুসলিম)

কুরআনুল কারীমে ও হাদীসে মুসলিম জাতির প্রতিটি সদস্যকে একে অপরের ভাই হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন- ‘‘মুমিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই’’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এক ভাই অন্য ভাইয়ের সাহায্য সহযোগিতায় সব সময় তৎপর থাকবে, তার সুখে, দুঃখের অংশীদার হবে। তার অধিকার সম্পর্কে সর্বদা সচেতন থাকবে এটাই প্রকৃতির দাবি। আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) বলেন- ‘‘মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে না তার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করতে পারে, না তাকে মিথ্যা বলতে পারে। আর না তাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে পারে। বস্তুতঃ প্রত্যেক মুসলমানের মান-ইজ্জত, ধন-সম্পদ, ও রক্ত অন্য সব মুসলমানের উপর হারাম। (তিনি বক্ষস্থলের দিকে ইশারা করলেন)। তাকওয়া এখানে আছে। কোন ব্যক্তির খারাপ হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে ঘৃণা করে, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করে’’। (তিরমিযী)

 সমবেদনা : এক মুসলমান অন্য মুসলমানের সংকটকালে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসবে।

সদস্য লগইন